অংশীদারি ব্যবসায়ের প্রকারভেদ

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র | NCTB BOOK

একাধিক ব্যক্তি চুক্তির মাধ্যমে মুনাফা অর্জনের জন্য যে ব্যবসায় গড়ে তোলে তাকে অংশীদারি ব্যবসায় বলে বাস্তব ক্ষেত্রে আমরা কয়েক ধরনের অংশীদারি ব্যবসায় দেখি। নিম্নে ব্যবসায়ের প্রকৃতি ও অংশীদারদের দায়-দায়িত্বের ভিত্তিতে এ ব্যবসায়কে কয়েকটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। যথা—

চিত্র: অংশীদারি ব্যবসায়ের প্রকারভেদ

১। সাধারণ অংশীদারি ব্যবসায় (General partnership business): যে অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের অংশীদারদের দায় অসীম এবং অংশীদারগণ একক ও যৌথভাবে দেনা পরিশোধের জন্য দায়ী থাকে তাকে সাধারণ অংশীদারি ব্যবসায় বলে। এ ধরনের অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনায় সকল অংশীদারের সমান অধিকার থাকে। সাধারণ অংশীদারি ব্যবসায় সকলের দ্বারা অথবা সকলের পক্ষে এক বা একাধিক অংশীদারের দ্বারা পরিচালিত। বাংলাদেশে অংশীদারি ব্যবসায় বলতে সাধারণ অংশীদারি ব্যবসায়কে বুঝায়। বাংলাদেশে প্রচলিত ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইন অনুযায়ী সাধারণ অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক নয় । এরূপ ব্যবসায় দু'ধরনের হতে পারে। 

ক. ঐচ্ছিক অংশীদারি ব্যবসায় (Partnership at will):
১৯৩২ সালের অংশীদারি আইন অনুসারে কোনো অংশীদারি চুক্তিপত্রে অংশীদারগণ ব্যবসায়ের স্থায়িত্ব বা সীমানা নির্ধারণ না করলে তাকে ঐচ্ছিক অংশীদারি ব্যবসায় বলে।

আইন অনুসারে এ ব্যবসায় নিম্নোক্তভাবে গঠিত হতে পারে—
i. অনির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ব্যবসায় গঠিত হলে;
ii. নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনের পরও ব্যবসায় চালু থাকলে; 

iii. নির্দিষ্ট সময়ের পরও ব্যবসায় চালু থাকলে;

খ. নির্দিষ্ট অংশীদারি ব্যবসায় (Particular partnership): অংশীদারি আইনের ৮ ধারায় বলা হয়েছে যে, একজন ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির সাথে একত্রে কোনো নির্দিষ্ট মেয়াদ বা প্রচেষ্টার জন্য অংশীদারি হিসেবে গণ্য হতে পারে। একেই নির্দিষ্ট বা বিশেষ অংশীদারি ব্যবসায় বলে ।
এরূপ ব্যবসায় দুধরনের হতে পারে—

i. নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রতিষ্ঠিত অংশীদারি ব্যবসায় (Specific term partnership): একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য গঠিত অংশীদারি ব্যবসায়কে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রতিষ্ঠিত অংশীদারি ব্যবসায় বলে। এ নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম হওয়ার সাথে সাথে এরূপ অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলুপ্তি ঘটে। তবে অংশীদারগণের সম্মতিতে এ ধরনের ব্যবসায়ের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও চালু থাকতে পারে।

ii. নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনের জন্য প্রতিষ্ঠিত অংশীদারি ব্যবসায় (Specific Job partnership): বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কোনো অংশীদারি ব্যবসায় গঠন করা হলে তাকে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনের জন্য স্থাপিত অংশীদারি ব্যবসায় বলা হয়। নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য অর্জিত হলে এর বিলুপ্তি ঘটে। অবশ্য সকল অংশীদার একমত হলে এরপরও চালাতে পারে।

২। সীমাবদ্ধ অংশীদারি ব্যবসায় (Limited partnership): এক বা একাধিক অংশীদারের সীমিত পরিমাণ দায়-দায়িত্ব নিয়ে যে অংশীদারি ব্যবসায় গঠিত হয় তাকে সীমাবদ্ধ অংশীদারি ব্যবসায় বলে । অর্থাৎ যদি কোনো অংশীদারের দায় অসীম না থাকে বা কোনো এক বা একাধিক সদস্যের দায় চুক্তি অনুযায়ী বা আইনগত কারণে সীমাবদ্ধ থাকে তাকে সীমাবদ্ধ অংশীদারি ব্যবসায় বলে ।

এ ব্যবসায় দু'ধরনের অংশীদার থাকে । যথা—
i. সাধারণ অংশীদার, যাদের দায় অসীম থাকে ।
ii. সীমিত অংশীদার, যাদের দায় সীমাবদ্ধ থাকে। 

পরিশেষে বলা যায় যে, দেশে যেসব অংশীদারি ব্যবসায় চালু আছে তার মধ্যে সাধারণ অংশীদারি ব্যবসায় বেশি। তবে এর পাশাপাশি সীমাবদ্ধ অংশীদারি ব্যবসায়েরও অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়।

Content added By
Promotion